Sunday, August 30, 2020

তোমার সাথে কবে দেখা হবে?


প্রিয় তরু
কেমন আছো? হয়তো আমার সুপ্ত প্রার্থনার সূত্রে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষগুলোর মধ্যে ভালোই আছো। আমার চিঠি পেয়ে তোমার চেহারায় যে নির্বাক চলচ্চিত্রের ছাপ পড়েছে তা আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। এমন নির্বাক ছাপে সব মেয়েদের সুন্দর দেখায় না। তোমাকে বেশ দারুণ লাগছে প্রিয়।

আমার চব্বিশটা হাড়েঁর প্রকোষ্ঠে লুকায়িত খাঁচাটায় তোমার শুন্যতা আজ চতুর্থ বছরে পদার্পণ করলো। তাই আজ এ অন্ধকার বদ্ধঘরে তোমাকে খানিকটা লিখতে ইচ্ছে হলো।

সেবার শরতের শেষ বিকেলে তুমুল বৃষ্টিতে ভেজা শহরের পরিচিত যাত্রী চাউনিতে তুমি বলেছিলে

*আগামী শুক্রবার বাদ জোহর বিয়ের সময় নির্ধারিত। সেই আমেরিকান ছেলেটি, এ বছর আমাকেও নিয়ে যাবে*

চূর্ণবিচূর্ণ হৃদয় নিয়ে, হাসিমুখে তোমাকে বলেছিলাম

*আচ্ছা তনু রান্না বান্নার জন্য কোন বাবুর্চিকে বলেছো?
আমার একজন পরিচিত ভাই আছে... ইব্রাহিম ভাই ভালো রান্না করে কিন্তু। তুমি চাইলে উনাকে বলতে পারি। আমি আবার বেশি ঝাল খেতে পারি না*

তুমি কেঁদেছিলে খুব। চোখে নোনা বৃষ্টির ঝড় তুলে তুমি শেষ বিদায় নিয়েছিলে। বিদায় বেলা আমাকে ওয়াদা করিয়েছিলে আমি যেন ধুমপান না করি।

সেই শুক্রবার বাদ জোহর আর তোমার বাড়িতে যাওয়া হলো না আমার। লাল বেনারসিতে তুমি অন্যকারো সেটা যে নিজ চোখে দেখা মহাপাপ।
তোমাকে দেওয়া ওয়াদা ও রাখা হলো না আর। যে ঘরে তুমি নেই সে ঘরটা যদি একটু ধোঁয়াশায় ঘেরা থাকে তাহলে ক্ষতি কি? অন্তত ঘরটা খালি দেখায় না। মনে হয় ধোঁয়ার কারণে তোমাকে দেখা যায় না।

জানো সেদিন তোমার সেই প্রিয় জায়গাটিতে গিয়েছিলাম। যেখানে মধ্যরাতে তুমি চন্দ্রবিলাস করতে লোক চক্ষুর অন্তরালে। ঘুমন্ত শহরে একা চাঁদকে সঙ্গী করে গাছের শিকড়ে ঠাঁই হতো দুই দোয়েলের। আজ তুমি শুন্য জায়গাটি যেন প্রাণহীন।
খুব অপেক্ষায় ছিলাম আমি। তোমার অপেক্ষা। অপেক্ষার প্রহর কাটিয়ে যখন চলে আসবো.. ঠিক তখন তোমার একটি ছায়া এসে জড়িয়ে ধরলো আমায়। বলল- *রাত গভীর হচ্ছে তুমি চলে যাও। আমাকে একটি হরমোনাল রোবটে ফুল ফোঁটাতে হবে।*
আমি চলে এলাম।

তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে খুব। এক হাজার ছিয়ানব্বইটা দিন তোমাকে দেখি না। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে অতৃপ্ত আত্মাটাকে তোমার ঐ হরমোনাল রোবটে বিলীন করে দেই। শেষে ঘুমিয়ে পড়ি মুয়াজ্জিনের ডাকে।
ফজরের আজান দিচ্ছে, সবাই উঠে পড়বে। ইচ্ছে থাকলেও আর লিখা হচ্ছে না।
ভালো থেকো তুমি।

ইতি
তোমার প্রাক্তন

অতুন্দ্রীলার জন্মতিথি- লেখা চৌধুরী কামরুল হাসান সৌরভ


জন্মদিন হচ্ছে সূর্যের চারপাশে ৩৬৫ দিনের ঘূর্ণন যাত্রার প্রথম দিন। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির অধিবর্ষে ২০৮তম দিনে তোমার জীবনের বিংশতিতম বৎসরের যাত্রা শুভ হোক। শুভ জন্মদিন আমার বুক পকেটে সযত্নে রাখা অনুভূতির কাব্যে রচিত চিরকুট মোড়ানো রক্তিম গোলাপটি। সেই গোলাপ, যার নিরন্তর পাহারা দেয় এক কাঁটার বাগান। কুয়াশার চাদর মোড়ানো কোন এক আগমনী শীতের সকালে প্রথম তোমায় দেখেছিলাম প্রতিমার প্রতিচিত্রে। শীতল সেই দিনটিতে তোমার প্রেমে পড়েছিলাম। তারপর থেকে আজ অব্ধি বুক পকেটের রক্তিম গোলাপটি তোমার ঠিকানায় পৌঁছাতে পারিনি। চেষ্টা করিনি বললে ভূল হবে, বহুবার চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। আমি ঠিক ততটাই ব্যর্থ যতটা ব্যর্থ হলে কোলাহলে তোমাকে পরিচয় দিতে পারি না যে, আমিই তোমার বোকা প্রেমিক। জানিনা কোনোদিন পেরে উঠবো কিনা। আমি জানিনা আমার ক্লান্ত সমাচার কোনোদিন তোমার ঠিকানা ছোঁবে কিনা। ভেবেছিলাম আজকের দিনটিতে খুব বড় আয়োজনে তোমাকে দেখাবো আমার অনুভূতির দেওয়ালে সৃষ্ট তোমার সাদা রঙের চিত্রকর। তবে আজ পৃথিবী আমাকে আবার বুঝিয়ে দিলো সে তার নিজস্ব নিয়মে পা বাড়ায়।

আমাদের ইচ্ছা অনিচ্ছার ধার ধারে না সে। আর তাই পরিস্থিতির কাছে আমার ইচ্ছেগুচ্ছ আজ কাঁপনে জড়ানো লাশ। শেষে অতৃপ্ত আত্মার শেষ ভরসা এই গাঙচিলে চিঠি। জানি ঠোঁটের পাশের কর্পোরেট অহংকার ও হৃদপিণ্ডের ক্যালকুলেশনে আমার অনুভূতি নিতান্তই শুন্য। তবুও নিয়ম ভেঙে নিয়ম করেই বলি ভালোবাসি। ক্ষনিকের লোকালয়ে আমার তন্দ্রাশুন্য স্বপ্নগুচ্ছের বৃহত্তর স্বপ্ন হচ্ছে, বৃদ্ধ বয়সে আমি একটা নদীর পাশে জীবনের শেষ মূহুর্তগুলি কাটাতে চাই। তার কিনারায় বসে-ই আমি আমার ভাজ পড়া চামড়ায় আজকের দিনগুলির কথা মনে করে খুব হাসবো। আবার যখন আজকের তুমি শুন্য একটা অনুভব হবে নিজের অজান্তেই দুপোটা জল নাকের গলি চুবে, তখন সেই নদীটি আমার চোখ মুছে আবার আমাকে হাঁসাবে। যার নাম রেখেছি আমি অতুন্দ্রীলা। প্রিয় অতুন্দ্রীলা তুমি কি সেদিনের সেই হাসিমাখা নদী হবে? এখানে-ই পৃথিবীর সবচেয়ে দূর্লভ সুখের দেয়ালে আমি একটি কুটির নির্মাণ করবো। যেখান থেকে আমি রোজ পাঁচ বার করে ভালোবাসা কুড়াবো। সেই ভালোবাসা যে ভালোবাসার সন্ধান মধ্যবিত্তরা-ই বেশি পায়। কুটির টাও আমাকে জড়িয়ে রাখবে এক অদ্ভুত শিহরণে যে শিহরণের সৃষ্ট নব্বই দশকের সহজ-সরল নারীরা। কুটির-টার নাম হবে প্রতিমা কুটির। তুমি কি একটিবারের জন্যও আমার সেই কুটির হতে পারো না? মধ্যরাতে যখন আমার খুব মন খারাপ থাকবে তখন একটি বৃক্ষের নিচে বসে পানের বাটখারা হাতে নিয়ে দূর আকাশের একা চাঁদটার সাথে কথা বলবো। তাঁকে বলবো আমাদের বন্ধুত্বের গল্প। হাসতে হাসতে বলবো কতটা বিচক্ষণভাবে বন্ধুত্বের তকমায় আমাকে বেঁধে দিলে তুমি। সেদিনের সেই বটবৃক্ষকে আমি নীলাদ্রি নামে ডাকবো। কারন তার ডাল-পাতা সবগুলোই নীলের আভা মিশে থাকবে। হতে পারো কি আমার সেই বটবৃক্ষ? এখান থেকে একটুখানি হাঁটলেই আমার সমাদী হবে একটি উঁচু পাহাড়ের চূড়ায়। যেখানে সূর্যাস্ত সূর্যোদয় সবার আগে আমার সমাদী ছোঁবে। খোলা আকাশের নিচে গগনচুম্বী সেই পাহাড়ের নাম রেখেছি আমি আকাশী। জীবনের শেষ মূহুর্তে কিঞ্চিৎ ভালোবাসায় কি হতে পারো না আমার সেই পাহাড়ের চূড়া? কোন এক জোৎস্না বিলাসী রাতে বটের তলায় শুয়ে তোমার কোলে মাথা রেখে আকাশ পানে তাকিয়ে কবিতা শোনাবো তোমাকে। তেমাকে নিয়ে লেখা আমার অপ্রকাশিত প্রথম কবিতা "প্রিয় অতুন্দ্রীলা"। ভাজ পড়া চামড়ায় সাদা চুলের একটা বুড়ির প্রেমে আবার পড়বো সেদিন। আজকের হারিয়ে যাওয়া আমিটাকে আবার নতুন করে আঁকবো সেদিনের সেই তুমিটার মাঝে। সেদিনই তোমাকে নিয়ে লেখা আমার ৭ম চিঠি "একগুচ্ছ শুন্যতা" কে তুমি প্রথম পূর্নতা প্রদান করবে। সেদিনই পৃথিবী প্রথম তার সাংবিধানিক নীতি রক্ষা করবে। যে নীতিতে পৃথিবী বলেছিলো মানুষ ভালোবাসলে ভালোবাসা পায়। আজ অব্ধি আমি পায়নি তবে অপেক্ষায় সেদিনের। হে আমার মধ্যরাতের বালিশ জড়ানো অনাকাঙ্ক্ষিত বর্ষণ, হে আমার মনছুয়ে যাওয়া একমাত্র তরুণী, আমার একতরফা অনুভূতির মহাকাব্য, বিশ্বাস করো রক্তের জোরে কোনো না কোনোভাবে আমার যৌবন ঠিকই কেটে যাবে তবে বৃদ্ধ বয়সে যখন সন্তানরা আধুনিকতার ছোঁয়ায় বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে চাইবে তখন তোমাকে আমার লাগবেই। স্বপ্নীল সেই নগরটি গড়তে তোমাকে আমার খুব করে লাগবে। আজকের ফিরিয়ে দেওয়া প্রেম যেন না হয় সেদিন আমার বুকভরা কান্নার একমাত্র কারণ। রক্তের জোরে আজ যতটুকু সহ্য করে নিচ্ছি, বিশ্বাস করো সেদিন এ যন্ত্রণা সয়ে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।