Wednesday, August 19, 2020

সেন্টমার্টিন যাবো আপনাকে নিয়ে


চৌধুরী কামরুল হাসান সৌরভ   
আমার একটা স্বপ্ন আছে আপনি কি শুনবেন? 
আমার বয়স যখন ঠিক পচাত্তর, আপনারও সত্তর ছুঁই ছুঁই।
তখন দু'জনে একসাথে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাবো।
আমার খুব স্বপ্ন জানেন?
মধ্যরাতে আপনাকে নিয়ে সমুদ্র পাড়ে যাবো। আপনি একটি নিল শাড়ি পড়বেন, আমি হলুদ পাঞ্জাবি। যদিও রংটা রুপা আর হিমুর হয়ে গেলো। তবে এ গল্পে আমরা তাদের মত বিচ্ছেদি হবো না। আমার বিশ্বাস আমাদের গল্প জীবনের সেই সমুদ্র স্নান পর্যন্ত পৌঁছাবে। আমি আপনার নরম হাতটা ধরে আড়চোখে দেখবো আপনাকে। আপনি আমার গাড়ে মাথাটা রাখবেন। আমরা দক্ষিণে মুখ করে দাড়িয়ে আকাশপানে তাকিয়ে সমুদ্রের গর্জনে সমুদ্রের গান গাইবো।
আপনার হাতে হাত রেখে একটু পর পর বলবো ভালোবাসি।
হ্যা প্রিয় আপনাকে
ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি।

Monday, August 17, 2020

বাবার কাছে চিঠি

রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ   
আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া তসলিমা নাসরিনকে বিয়ে করার পর পিতার কাছে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর লেখা চিঠি....

আব্বা,
পথে কোনো অসুবিধা হয়নি। নাসরিনকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে গত পরশু ঢাকায় ফিরেছি। আপনাদের মতামত এবং কোনোরকম আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া আমি বিয়ে করে বৌ বাড়ি নিয়ে যাওয়াতে আপনারা কষ্ট পেয়েছেন। কিন্তু আমি তো আমার জীবন এভাবেই ভেবেছি। আপনার সাথে আমার যে ভুল বোঝাবুঝিগুলো তা কখনই চ্যালেঞ্জ বা পিতা-পুত্রের দ্বন্দ্ব নয়, স্পষ্টতই তা দুটো বিশ্বাসের দ্বন্দ্ব। ব্যক্তি আপনাকে আমি কখনোই ভুল বুঝিনি, আমি জানি না আমাকে আপনারা কিভাবে বোঝেন। এতো চরম সত্য যে, একটি জেনারেশনের সাথে পরবর্তী জেনারেশনের অমিল এবং দ্বন্দ্ব থাকবেই। যেমন আপনার সাথে আপনার আব্বার অমিল ছিলো, আপনার সাথে আমার এবং পরবর্তীতে আমার সাথে আমার সন্তানদের। এই দ্বন্দ্ব ও সংঘাত কোনোভাবেই রোধ করা সম্ভব নয়। আমরা শুধু এই সংঘাতকে যুক্তিসঙ্গত করতে পারি; পারি কিছুটা মসৃন করতে। সংঘাত রোধ করতে পারিনা। পারলে ভালো হতো কিনা জানিনা। তবে মানুষের জীবনের বিকাশ থেমে যেতো পৃথিবীতে।
আমার মনে পড়ে না। এই ছাব্বিশ বছরে একদিনও পিতা হিসাবে আপনার সন্তানদের আদর করে কাছে টেনে নেননি। আশেপাশে অন্য বাবাদের তাদের সন্তানদের জন্য আদর দেখে নিজেকে ভাগ্যহীন মনে হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে কখনো কষ্ট প্রকাশ করিনি। ছেলেবেলায় আমার খেলতে ভালো লাগতো। খেললে আমি ভালো খেলোয়ার হতাম। আপনি খেলতে দিতেন না। ভাবতাম, না খেললেই বোধ হয় ভালো। ভালো মানুষেরা বোধ হয় খেলে না। আবার প্রশ্ন জাগতো, তাহলে আমার খেলতে ভালো লাগে কেনো? আমি কি তবে খারাপ মানুষ? আজ বুঝি, খেলা না খেলার মধ্যে মানুষের ভালো-মন্দ নিহিত নয়। কষ্ট লাগে। আমিও স্বপ্ন দেখতাম, আমি ডাক্তার হবো। আপনার চেয়ে বড় ডাক্তার হয়ে আপনাকে ও নিজেকে গৌরব দেবো। সন্তান বড় হলে পিতারই তো সুখ। আমি সেভাবে তৈরীও হচ্ছিলাম। কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধের পর কি যে এক বিরাট পরিবর্তন এলো ! একটি দেশ, একটি নতুন দেশের জন্ম হলো, নতুন চিন্তার সব হতে লাগলো। নতুন স্বপ্ন এলো মানুষের মনে। সবাই অন্যরকম ভাবতে শুরু করলো। আমিও আমার আগের স্বপ্নকে ধরে রাখতে পারিনি। তারচেয়ে বড় এক স্বপ্ন, তারচেয়ে তাজা এক স্বপ্ন, তারচেয়ে বেগবান এক স্বপ্নকে আমি কাছে টেনে নিলাম। আমি সিরিয়াসলি লিখতে শুরু করলাম। আগেও একটু আধটু লিখতাম, এবার পুরোপুরি। আমি আমার আগের সব চিন্তা-ভাবনার প্রভাব ঝেড়ে ফেলতে লাগলাম। চিন্তা থেকে, জীবন থেকে, বিশ্বাস-আদর্শ থেকে, অনেক কিছুর সঙ্গেই সংঘর্ষ হতে লাগলো। অনেক কিছুর সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির শুরু হলো। কখনো ক্ষোভে আমি অপ্রত্যাশিত কিছু করে ফেলতে লাগলাম। আপনার সাথে আমার সাথে বিশ্বাসের সাথে মিল এমন মানুষের দেখা পেলাম। তাদের সাথে সংঘাতও হলো। একি ! সবার সাথে সংঘর্ষ হয় কেন? মনে মনে আমি ভীষণ অস্থির হয়ে পড়লাম। তাহলে কি এপথ ভুল পথ? আমি কি ভুল পথে চলেছি? কখনো মনে হয়েছে, আমিই ঠিক, এই প্রকৃত পথ। মানুষ যদি নিজেকে ভালোবাসতে পারে তবে সবচেয়ে সুন্দর হবে। নিজেকে ভালোবাসতে গেলে সে তার পরিবারকে ভালোবাসবে। আর পরিবারকে ভালোবাসা মানেই একটি গ্রামকে ভালোবাসা। একটি গোষ্ঠীর মানুষকে ভালোবাসবে। আর একটি গ্রাম মানেই তো সারা পৃথিবী। পৃথিবীর সব মানুষ – সব মানুষ সুন্দর হয়ে বাঁচবে। পৃথিবীতে কত বড় বড় কাজ করেছে মানুষ। একটা ছো্ট্ট পরিবারকে সুন্দর করা যাবে না? অবশ্যই যাবে। একটু যৌক্তিক হলে, একটু খোলামেলা হলে কত সমস্যা এমনিতেই মিটে যাবে। সম্পর্ক সহজ হলে কাজ সহজ হয়। আমরা চাইলেই তা করতে পারি।
জানিনা এ চিঠিখানায় আপনি ভুল বুঝবেন কিনা। ঈদের আগে আগে বাড়ি আসবো। আম্মাকে বলবেন, যেন বড় মামার কাছ থেকে হাজার চারেক টাকা নিয়ে আমাকে পাঠায়। বাসায় রান্নার কিছুই কেনা হয়নি। বাইরের খাওয়ায় খরচ বেশী এবং অস্বাস্থ্যকর। আম্মার তদারকিতে দেওয়া সম্পত্তির এটুকুই তো রিটার্ন মাত্র। আপনার সেন্টিমেন্টে লাগতে পারে। লাগাটাই স্বাভাবিক। কারণ আপনার শ্বশুড়বাড়ি। আমাদের কিসের সেন্টিমেন্ট? শিমু মংলায় পড়বে, বাবু স্কুলে। আপনারা না চাইলেও এসব করা হবে। দোয়া করবেন।

Sunday, August 16, 2020

প্রকৃতি ভূলেনি


লেখা ঃ মুনিয়া
শুনেছি তার আবার নতুন মানুষ হয়েছে....
এবার আর সে অভিনয় নয়,
ভালোবাসতে শিখেছে!

রোজ পুড়েছি যার ভালোবাসায়;
আজ সে'ও নাকি পুড়ছে,
অন্য কারো অবহেলায়!

নতুন কাউকে পেয়েই যে অবহেলায় পায়ে
ঠেলেছিল আমায়;
এখন সে'ও কারো পায়ের কাছে নত হয়ে রয়!

দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে যে মানুষটা বারবার ঠকিয়েছে আমায়;
সত্যি ভালোবেসে,
আজ সে'ও হেরে যায়।

সেদিন আমার চিৎকার যার কান অব্দি পৌছায় নি,
দেখে'ও দেখেনি যার চোখ;
আজ যে তার নীরব কান্নার অধিকারটুকু'ও নেই!

যার বিরহে অশ্রু ঝরে পাথর হয়েছে চোখ;
আজ তার জীবন জুড়ে আছে দীর্ঘ শোক।

হ্যাঁ! এখন তার নতুন মানুষ হয়েছে।
আমাকে তিলে তিলে করেছিল যে শেষ,
তার প্রতিশোধ'ই নিচ্ছে আজ তার নতুন মানুষ!

নাহ, অভিশাপ দেই নি কখনো।
কিন্তু প্রকৃতি?
সে ভুলে গিয়েছিল,
প্রকৃতি ভুলে নি!

তার আবার নতুন মানুষ হয়েছে.....
ভালোবাসার মানুষ!!

ইচ্ছে




সৌরভ 
তোমাকে একটি চিঠি লিখতে ইচ্ছে হয়। নিস্তব্ধতায় তুমিহীনতার গল্প বলতে ইচ্ছে হয়। কোলাহলী অভিনয়ে আমি ক্লান্ত। মনের আকাশে মেঘ জমেছে খুব। বৃষ্টি নামলে মন্দ হতো না। বৃষ্টিশুন্য মেঘ কেবলই অন্ধকারের গল্প লিখে। তুমি আক্ষেপ নাকি অপেক্ষা আমি জানিনা। তবে তুমিই সূর্যোদয় সূর্যাস্ত। তোমাকে যদি বোঝাতে পারতাম আমার উঠে দাঁড়ানোর মুহূর্তে তোমাকে কতখানি প্রয়োজন তাহলে হয়তো আজ অন্য সারমর্মে আমার অবস্থান থাকতো! তোমাকে বোঝাতে ইচ্ছে হয়। 
রাত এখন ২ঃ৫৮ মিনিট ছায়াশুন্য অন্ধকারে একা কামরায় মোমবাতি জ্বালিয়ে তোমাকে আমার ইচ্ছে লিখছি। ধোঁয়াশা ঠোঁট, একহাতে কলম অন্যহাতে ঘুমের ঔষধ। খুব ঘুমাতে ইচ্ছে হয়। আমার এ-ও ইচ্ছে হয় এই মুহূর্তে তোমার কোলে মাথা রেখে পৃথিবীতে আমার শেষ ঘুমটাকে বরণ করে নিতে।
জানালার ওপাশে ঝিঁঝি পোকারা খুব ডাকছে আমায়। তারা আমার কাছে তোমার নাম জানতে চাই। কি বলবো বলতো? অতুন্দ্রীলা, নীলাদ্রি, নাকি তরু? 
এগুলো তো তোমার নাম না শুধুই আমি ডাকি। তাহলে কি বলবো ওদের? 
তোমাকে চিনানো টা-ও যে বারন।
তোমাকে চিনাতে ইচ্ছে হয়। শহরের প্রতিটি বিলবোর্ডে এমনকি প্রতিটি কংক্রিটেও লিখে দিতে ইচ্ছে হয় *তুমি শুধু আমার! শুধুই আমার*। 
প্রিয় আমার শেষ বিদায়ে তুমি থেকো না। আমার আত্মা তোমাকে প্রশ্ন করতে পারে হয়তো, কেন এলে না অল্প কিছুক্ষণ পূর্বে?
খুব ঘুম পাচ্ছে আমার! 
ভালো থেকো আমার নীল রঙের বিষাদ।