প্রিয় তরু
কেমন আছো? হয়তো আমার সুপ্ত প্রার্থনার সূত্রে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষগুলোর মধ্যে ভালোই আছো। আমার চিঠি পেয়ে তোমার চেহারায় যে নির্বাক চলচ্চিত্রের ছাপ পড়েছে তা আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। এমন নির্বাক ছাপে সব মেয়েদের সুন্দর দেখায় না। তোমাকে বেশ দারুণ লাগছে প্রিয়।
আমার চব্বিশটা হাড়েঁর প্রকোষ্ঠে লুকায়িত খাঁচাটায় তোমার শুন্যতা আজ চতুর্থ বছরে পদার্পণ করলো। তাই আজ এ অন্ধকার বদ্ধঘরে তোমাকে খানিকটা লিখতে ইচ্ছে হলো।
সেবার শরতের শেষ বিকেলে তুমুল বৃষ্টিতে ভেজা শহরের পরিচিত যাত্রী চাউনিতে তুমি বলেছিলে
*আগামী শুক্রবার বাদ জোহর বিয়ের সময় নির্ধারিত। সেই আমেরিকান ছেলেটি, এ বছর আমাকেও নিয়ে যাবে*
চূর্ণবিচূর্ণ হৃদয় নিয়ে, হাসিমুখে তোমাকে বলেছিলাম
*আচ্ছা তনু রান্না বান্নার জন্য কোন বাবুর্চিকে বলেছো?
আমার একজন পরিচিত ভাই আছে... ইব্রাহিম ভাই ভালো রান্না করে কিন্তু। তুমি চাইলে উনাকে বলতে পারি। আমি আবার বেশি ঝাল খেতে পারি না*
তুমি কেঁদেছিলে খুব। চোখে নোনা বৃষ্টির ঝড় তুলে তুমি শেষ বিদায় নিয়েছিলে। বিদায় বেলা আমাকে ওয়াদা করিয়েছিলে আমি যেন ধুমপান না করি।
সেই শুক্রবার বাদ জোহর আর তোমার বাড়িতে যাওয়া হলো না আমার। লাল বেনারসিতে তুমি অন্যকারো সেটা যে নিজ চোখে দেখা মহাপাপ।
তোমাকে দেওয়া ওয়াদা ও রাখা হলো না আর। যে ঘরে তুমি নেই সে ঘরটা যদি একটু ধোঁয়াশায় ঘেরা থাকে তাহলে ক্ষতি কি? অন্তত ঘরটা খালি দেখায় না। মনে হয় ধোঁয়ার কারণে তোমাকে দেখা যায় না।
জানো সেদিন তোমার সেই প্রিয় জায়গাটিতে গিয়েছিলাম। যেখানে মধ্যরাতে তুমি চন্দ্রবিলাস করতে লোক চক্ষুর অন্তরালে। ঘুমন্ত শহরে একা চাঁদকে সঙ্গী করে গাছের শিকড়ে ঠাঁই হতো দুই দোয়েলের। আজ তুমি শুন্য জায়গাটি যেন প্রাণহীন।
খুব অপেক্ষায় ছিলাম আমি। তোমার অপেক্ষা। অপেক্ষার প্রহর কাটিয়ে যখন চলে আসবো.. ঠিক তখন তোমার একটি ছায়া এসে জড়িয়ে ধরলো আমায়। বলল- *রাত গভীর হচ্ছে তুমি চলে যাও। আমাকে একটি হরমোনাল রোবটে ফুল ফোঁটাতে হবে।*
আমি চলে এলাম।
তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে খুব। এক হাজার ছিয়ানব্বইটা দিন তোমাকে দেখি না। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে অতৃপ্ত আত্মাটাকে তোমার ঐ হরমোনাল রোবটে বিলীন করে দেই। শেষে ঘুমিয়ে পড়ি মুয়াজ্জিনের ডাকে।
ফজরের আজান দিচ্ছে, সবাই উঠে পড়বে। ইচ্ছে থাকলেও আর লিখা হচ্ছে না।
ভালো থেকো তুমি।
ইতি
তোমার প্রাক্তন