Sunday, August 30, 2020

তোমার সাথে কবে দেখা হবে?


প্রিয় তরু
কেমন আছো? হয়তো আমার সুপ্ত প্রার্থনার সূত্রে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষগুলোর মধ্যে ভালোই আছো। আমার চিঠি পেয়ে তোমার চেহারায় যে নির্বাক চলচ্চিত্রের ছাপ পড়েছে তা আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। এমন নির্বাক ছাপে সব মেয়েদের সুন্দর দেখায় না। তোমাকে বেশ দারুণ লাগছে প্রিয়।

আমার চব্বিশটা হাড়েঁর প্রকোষ্ঠে লুকায়িত খাঁচাটায় তোমার শুন্যতা আজ চতুর্থ বছরে পদার্পণ করলো। তাই আজ এ অন্ধকার বদ্ধঘরে তোমাকে খানিকটা লিখতে ইচ্ছে হলো।

সেবার শরতের শেষ বিকেলে তুমুল বৃষ্টিতে ভেজা শহরের পরিচিত যাত্রী চাউনিতে তুমি বলেছিলে

*আগামী শুক্রবার বাদ জোহর বিয়ের সময় নির্ধারিত। সেই আমেরিকান ছেলেটি, এ বছর আমাকেও নিয়ে যাবে*

চূর্ণবিচূর্ণ হৃদয় নিয়ে, হাসিমুখে তোমাকে বলেছিলাম

*আচ্ছা তনু রান্না বান্নার জন্য কোন বাবুর্চিকে বলেছো?
আমার একজন পরিচিত ভাই আছে... ইব্রাহিম ভাই ভালো রান্না করে কিন্তু। তুমি চাইলে উনাকে বলতে পারি। আমি আবার বেশি ঝাল খেতে পারি না*

তুমি কেঁদেছিলে খুব। চোখে নোনা বৃষ্টির ঝড় তুলে তুমি শেষ বিদায় নিয়েছিলে। বিদায় বেলা আমাকে ওয়াদা করিয়েছিলে আমি যেন ধুমপান না করি।

সেই শুক্রবার বাদ জোহর আর তোমার বাড়িতে যাওয়া হলো না আমার। লাল বেনারসিতে তুমি অন্যকারো সেটা যে নিজ চোখে দেখা মহাপাপ।
তোমাকে দেওয়া ওয়াদা ও রাখা হলো না আর। যে ঘরে তুমি নেই সে ঘরটা যদি একটু ধোঁয়াশায় ঘেরা থাকে তাহলে ক্ষতি কি? অন্তত ঘরটা খালি দেখায় না। মনে হয় ধোঁয়ার কারণে তোমাকে দেখা যায় না।

জানো সেদিন তোমার সেই প্রিয় জায়গাটিতে গিয়েছিলাম। যেখানে মধ্যরাতে তুমি চন্দ্রবিলাস করতে লোক চক্ষুর অন্তরালে। ঘুমন্ত শহরে একা চাঁদকে সঙ্গী করে গাছের শিকড়ে ঠাঁই হতো দুই দোয়েলের। আজ তুমি শুন্য জায়গাটি যেন প্রাণহীন।
খুব অপেক্ষায় ছিলাম আমি। তোমার অপেক্ষা। অপেক্ষার প্রহর কাটিয়ে যখন চলে আসবো.. ঠিক তখন তোমার একটি ছায়া এসে জড়িয়ে ধরলো আমায়। বলল- *রাত গভীর হচ্ছে তুমি চলে যাও। আমাকে একটি হরমোনাল রোবটে ফুল ফোঁটাতে হবে।*
আমি চলে এলাম।

তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে খুব। এক হাজার ছিয়ানব্বইটা দিন তোমাকে দেখি না। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে অতৃপ্ত আত্মাটাকে তোমার ঐ হরমোনাল রোবটে বিলীন করে দেই। শেষে ঘুমিয়ে পড়ি মুয়াজ্জিনের ডাকে।
ফজরের আজান দিচ্ছে, সবাই উঠে পড়বে। ইচ্ছে থাকলেও আর লিখা হচ্ছে না।
ভালো থেকো তুমি।

ইতি
তোমার প্রাক্তন

অতুন্দ্রীলার জন্মতিথি- লেখা চৌধুরী কামরুল হাসান সৌরভ


জন্মদিন হচ্ছে সূর্যের চারপাশে ৩৬৫ দিনের ঘূর্ণন যাত্রার প্রথম দিন। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির অধিবর্ষে ২০৮তম দিনে তোমার জীবনের বিংশতিতম বৎসরের যাত্রা শুভ হোক। শুভ জন্মদিন আমার বুক পকেটে সযত্নে রাখা অনুভূতির কাব্যে রচিত চিরকুট মোড়ানো রক্তিম গোলাপটি। সেই গোলাপ, যার নিরন্তর পাহারা দেয় এক কাঁটার বাগান। কুয়াশার চাদর মোড়ানো কোন এক আগমনী শীতের সকালে প্রথম তোমায় দেখেছিলাম প্রতিমার প্রতিচিত্রে। শীতল সেই দিনটিতে তোমার প্রেমে পড়েছিলাম। তারপর থেকে আজ অব্ধি বুক পকেটের রক্তিম গোলাপটি তোমার ঠিকানায় পৌঁছাতে পারিনি। চেষ্টা করিনি বললে ভূল হবে, বহুবার চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। আমি ঠিক ততটাই ব্যর্থ যতটা ব্যর্থ হলে কোলাহলে তোমাকে পরিচয় দিতে পারি না যে, আমিই তোমার বোকা প্রেমিক। জানিনা কোনোদিন পেরে উঠবো কিনা। আমি জানিনা আমার ক্লান্ত সমাচার কোনোদিন তোমার ঠিকানা ছোঁবে কিনা। ভেবেছিলাম আজকের দিনটিতে খুব বড় আয়োজনে তোমাকে দেখাবো আমার অনুভূতির দেওয়ালে সৃষ্ট তোমার সাদা রঙের চিত্রকর। তবে আজ পৃথিবী আমাকে আবার বুঝিয়ে দিলো সে তার নিজস্ব নিয়মে পা বাড়ায়।

আমাদের ইচ্ছা অনিচ্ছার ধার ধারে না সে। আর তাই পরিস্থিতির কাছে আমার ইচ্ছেগুচ্ছ আজ কাঁপনে জড়ানো লাশ। শেষে অতৃপ্ত আত্মার শেষ ভরসা এই গাঙচিলে চিঠি। জানি ঠোঁটের পাশের কর্পোরেট অহংকার ও হৃদপিণ্ডের ক্যালকুলেশনে আমার অনুভূতি নিতান্তই শুন্য। তবুও নিয়ম ভেঙে নিয়ম করেই বলি ভালোবাসি। ক্ষনিকের লোকালয়ে আমার তন্দ্রাশুন্য স্বপ্নগুচ্ছের বৃহত্তর স্বপ্ন হচ্ছে, বৃদ্ধ বয়সে আমি একটা নদীর পাশে জীবনের শেষ মূহুর্তগুলি কাটাতে চাই। তার কিনারায় বসে-ই আমি আমার ভাজ পড়া চামড়ায় আজকের দিনগুলির কথা মনে করে খুব হাসবো। আবার যখন আজকের তুমি শুন্য একটা অনুভব হবে নিজের অজান্তেই দুপোটা জল নাকের গলি চুবে, তখন সেই নদীটি আমার চোখ মুছে আবার আমাকে হাঁসাবে। যার নাম রেখেছি আমি অতুন্দ্রীলা। প্রিয় অতুন্দ্রীলা তুমি কি সেদিনের সেই হাসিমাখা নদী হবে? এখানে-ই পৃথিবীর সবচেয়ে দূর্লভ সুখের দেয়ালে আমি একটি কুটির নির্মাণ করবো। যেখান থেকে আমি রোজ পাঁচ বার করে ভালোবাসা কুড়াবো। সেই ভালোবাসা যে ভালোবাসার সন্ধান মধ্যবিত্তরা-ই বেশি পায়। কুটির টাও আমাকে জড়িয়ে রাখবে এক অদ্ভুত শিহরণে যে শিহরণের সৃষ্ট নব্বই দশকের সহজ-সরল নারীরা। কুটির-টার নাম হবে প্রতিমা কুটির। তুমি কি একটিবারের জন্যও আমার সেই কুটির হতে পারো না? মধ্যরাতে যখন আমার খুব মন খারাপ থাকবে তখন একটি বৃক্ষের নিচে বসে পানের বাটখারা হাতে নিয়ে দূর আকাশের একা চাঁদটার সাথে কথা বলবো। তাঁকে বলবো আমাদের বন্ধুত্বের গল্প। হাসতে হাসতে বলবো কতটা বিচক্ষণভাবে বন্ধুত্বের তকমায় আমাকে বেঁধে দিলে তুমি। সেদিনের সেই বটবৃক্ষকে আমি নীলাদ্রি নামে ডাকবো। কারন তার ডাল-পাতা সবগুলোই নীলের আভা মিশে থাকবে। হতে পারো কি আমার সেই বটবৃক্ষ? এখান থেকে একটুখানি হাঁটলেই আমার সমাদী হবে একটি উঁচু পাহাড়ের চূড়ায়। যেখানে সূর্যাস্ত সূর্যোদয় সবার আগে আমার সমাদী ছোঁবে। খোলা আকাশের নিচে গগনচুম্বী সেই পাহাড়ের নাম রেখেছি আমি আকাশী। জীবনের শেষ মূহুর্তে কিঞ্চিৎ ভালোবাসায় কি হতে পারো না আমার সেই পাহাড়ের চূড়া? কোন এক জোৎস্না বিলাসী রাতে বটের তলায় শুয়ে তোমার কোলে মাথা রেখে আকাশ পানে তাকিয়ে কবিতা শোনাবো তোমাকে। তেমাকে নিয়ে লেখা আমার অপ্রকাশিত প্রথম কবিতা "প্রিয় অতুন্দ্রীলা"। ভাজ পড়া চামড়ায় সাদা চুলের একটা বুড়ির প্রেমে আবার পড়বো সেদিন। আজকের হারিয়ে যাওয়া আমিটাকে আবার নতুন করে আঁকবো সেদিনের সেই তুমিটার মাঝে। সেদিনই তোমাকে নিয়ে লেখা আমার ৭ম চিঠি "একগুচ্ছ শুন্যতা" কে তুমি প্রথম পূর্নতা প্রদান করবে। সেদিনই পৃথিবী প্রথম তার সাংবিধানিক নীতি রক্ষা করবে। যে নীতিতে পৃথিবী বলেছিলো মানুষ ভালোবাসলে ভালোবাসা পায়। আজ অব্ধি আমি পায়নি তবে অপেক্ষায় সেদিনের। হে আমার মধ্যরাতের বালিশ জড়ানো অনাকাঙ্ক্ষিত বর্ষণ, হে আমার মনছুয়ে যাওয়া একমাত্র তরুণী, আমার একতরফা অনুভূতির মহাকাব্য, বিশ্বাস করো রক্তের জোরে কোনো না কোনোভাবে আমার যৌবন ঠিকই কেটে যাবে তবে বৃদ্ধ বয়সে যখন সন্তানরা আধুনিকতার ছোঁয়ায় বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে চাইবে তখন তোমাকে আমার লাগবেই। স্বপ্নীল সেই নগরটি গড়তে তোমাকে আমার খুব করে লাগবে। আজকের ফিরিয়ে দেওয়া প্রেম যেন না হয় সেদিন আমার বুকভরা কান্নার একমাত্র কারণ। রক্তের জোরে আজ যতটুকু সহ্য করে নিচ্ছি, বিশ্বাস করো সেদিন এ যন্ত্রণা সয়ে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

Thursday, August 27, 2020

একজন ভেঙে যাওয়া মানুষ দরকার



🌸 আমার একজন ভেঙে যাওয়া মানুষ দরকার ।
যাকে ভীষন ভালোবেসে নিমর্মভাবে ছেড়ে দিয়েছিল কেউ..!🙂

যাকে মিথ্যা সংসারের স্বপ্ন দেখিয়ে ছুড়ে ফেলা হয়েছিলএমনভাবে ঠিক যেমনভাবে ইচ্ছে করে কাঁচের আয়না ভেঙে গুড়িয়ে ফেলা হয়..! 😊

আমার এমনই একজনকে দরকার
যে চরমভাবে ভালোবাসার কাছে ঠকে গিয়ে কেঁদে বালিশ ভিজিয়ে ক্লান্ত চোখে ঘুমিয়ে পড়তো প্রতি রাতে..!😇

ভালোবাসার বিনিময়ে যে রোজ অবহেলা গিলতো অথচ ভালোবাসা হারাবার ভয়ে পাল্টা অবহেলা ছুড়ে মারেনি কক্ষনো আমার এমন একজনকেই দরকার..! 🙂

আমি জানি ভেঙে যাওয়া সেই মানুষটা ভালোবাসার মূল্য দিতে জানে, সে জানে কিভাবে ভালোবাসাকে আগলে রাখতে হয় এক-বুক ভালোবাসা দিয়ে
তার চোখে থাকে বিশ্বাসের টলমল জল আর মুখে থাকে স্বীকৃতি দেবার ত্যেজ ..!😇

আমি জানি ভেঙে যাওয়া মানুষটা আর যা-ই হোক কখনোই কাউকে ভাঙবে না ভাঙতে পারে না যেমন করে তাকে ভেঙে ফেলা হয়েছিল কারণ সে বোঝে সেই জ্বালা..!😊

আমি জানি অপেক্ষা করেও সে মানুষটা বিরক্তি লুকিয়ে মুচকি হেসে বলে উঠতে পারে ভালোবাসি , ভালোবাসি , ভালোবাসি ....❤

আমি জানি সম্পর্ক ভেঙে যাবার পর মানুষ নতুন করে বাঁচতে ভুলে যায়,
বিশ্বাস করতে ভুলে যায়, ভালোবাসতে ভুলে যায় সাময়িকভাবে😊

কিন্তু আবার যখন জেগে উঠে ভালোবাসে নতুন করে তখন পূর্বের চেয়ে আরো বেশি গোছালো হয়ে উঠে..! 😇

আমার এমনই একজন ভেঙে যাওয়া মানুষ দরকার
যে মিথ্যা সম্পর্কের জাল ছিড়ে বের হয়েছে শত কষ্ট নিয়ে..!

আমি তাকেই ভালোবাসবো আবারো ভালোবাসাবো
আমি তার সাথেই বাঁচবো আবারো বাঁচাবো!
আমি সেই ভেঙে যাওয়া মানুষটার হবো
আমি ঠিক তারই হবো..!😇

Wednesday, August 19, 2020

সেন্টমার্টিন যাবো আপনাকে নিয়ে


চৌধুরী কামরুল হাসান সৌরভ   
আমার একটা স্বপ্ন আছে আপনি কি শুনবেন? 
আমার বয়স যখন ঠিক পচাত্তর, আপনারও সত্তর ছুঁই ছুঁই।
তখন দু'জনে একসাথে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাবো।
আমার খুব স্বপ্ন জানেন?
মধ্যরাতে আপনাকে নিয়ে সমুদ্র পাড়ে যাবো। আপনি একটি নিল শাড়ি পড়বেন, আমি হলুদ পাঞ্জাবি। যদিও রংটা রুপা আর হিমুর হয়ে গেলো। তবে এ গল্পে আমরা তাদের মত বিচ্ছেদি হবো না। আমার বিশ্বাস আমাদের গল্প জীবনের সেই সমুদ্র স্নান পর্যন্ত পৌঁছাবে। আমি আপনার নরম হাতটা ধরে আড়চোখে দেখবো আপনাকে। আপনি আমার গাড়ে মাথাটা রাখবেন। আমরা দক্ষিণে মুখ করে দাড়িয়ে আকাশপানে তাকিয়ে সমুদ্রের গর্জনে সমুদ্রের গান গাইবো।
আপনার হাতে হাত রেখে একটু পর পর বলবো ভালোবাসি।
হ্যা প্রিয় আপনাকে
ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি।

Monday, August 17, 2020

বাবার কাছে চিঠি

রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ   
আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া তসলিমা নাসরিনকে বিয়ে করার পর পিতার কাছে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর লেখা চিঠি....

আব্বা,
পথে কোনো অসুবিধা হয়নি। নাসরিনকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে গত পরশু ঢাকায় ফিরেছি। আপনাদের মতামত এবং কোনোরকম আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া আমি বিয়ে করে বৌ বাড়ি নিয়ে যাওয়াতে আপনারা কষ্ট পেয়েছেন। কিন্তু আমি তো আমার জীবন এভাবেই ভেবেছি। আপনার সাথে আমার যে ভুল বোঝাবুঝিগুলো তা কখনই চ্যালেঞ্জ বা পিতা-পুত্রের দ্বন্দ্ব নয়, স্পষ্টতই তা দুটো বিশ্বাসের দ্বন্দ্ব। ব্যক্তি আপনাকে আমি কখনোই ভুল বুঝিনি, আমি জানি না আমাকে আপনারা কিভাবে বোঝেন। এতো চরম সত্য যে, একটি জেনারেশনের সাথে পরবর্তী জেনারেশনের অমিল এবং দ্বন্দ্ব থাকবেই। যেমন আপনার সাথে আপনার আব্বার অমিল ছিলো, আপনার সাথে আমার এবং পরবর্তীতে আমার সাথে আমার সন্তানদের। এই দ্বন্দ্ব ও সংঘাত কোনোভাবেই রোধ করা সম্ভব নয়। আমরা শুধু এই সংঘাতকে যুক্তিসঙ্গত করতে পারি; পারি কিছুটা মসৃন করতে। সংঘাত রোধ করতে পারিনা। পারলে ভালো হতো কিনা জানিনা। তবে মানুষের জীবনের বিকাশ থেমে যেতো পৃথিবীতে।
আমার মনে পড়ে না। এই ছাব্বিশ বছরে একদিনও পিতা হিসাবে আপনার সন্তানদের আদর করে কাছে টেনে নেননি। আশেপাশে অন্য বাবাদের তাদের সন্তানদের জন্য আদর দেখে নিজেকে ভাগ্যহীন মনে হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে কখনো কষ্ট প্রকাশ করিনি। ছেলেবেলায় আমার খেলতে ভালো লাগতো। খেললে আমি ভালো খেলোয়ার হতাম। আপনি খেলতে দিতেন না। ভাবতাম, না খেললেই বোধ হয় ভালো। ভালো মানুষেরা বোধ হয় খেলে না। আবার প্রশ্ন জাগতো, তাহলে আমার খেলতে ভালো লাগে কেনো? আমি কি তবে খারাপ মানুষ? আজ বুঝি, খেলা না খেলার মধ্যে মানুষের ভালো-মন্দ নিহিত নয়। কষ্ট লাগে। আমিও স্বপ্ন দেখতাম, আমি ডাক্তার হবো। আপনার চেয়ে বড় ডাক্তার হয়ে আপনাকে ও নিজেকে গৌরব দেবো। সন্তান বড় হলে পিতারই তো সুখ। আমি সেভাবে তৈরীও হচ্ছিলাম। কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধের পর কি যে এক বিরাট পরিবর্তন এলো ! একটি দেশ, একটি নতুন দেশের জন্ম হলো, নতুন চিন্তার সব হতে লাগলো। নতুন স্বপ্ন এলো মানুষের মনে। সবাই অন্যরকম ভাবতে শুরু করলো। আমিও আমার আগের স্বপ্নকে ধরে রাখতে পারিনি। তারচেয়ে বড় এক স্বপ্ন, তারচেয়ে তাজা এক স্বপ্ন, তারচেয়ে বেগবান এক স্বপ্নকে আমি কাছে টেনে নিলাম। আমি সিরিয়াসলি লিখতে শুরু করলাম। আগেও একটু আধটু লিখতাম, এবার পুরোপুরি। আমি আমার আগের সব চিন্তা-ভাবনার প্রভাব ঝেড়ে ফেলতে লাগলাম। চিন্তা থেকে, জীবন থেকে, বিশ্বাস-আদর্শ থেকে, অনেক কিছুর সঙ্গেই সংঘর্ষ হতে লাগলো। অনেক কিছুর সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির শুরু হলো। কখনো ক্ষোভে আমি অপ্রত্যাশিত কিছু করে ফেলতে লাগলাম। আপনার সাথে আমার সাথে বিশ্বাসের সাথে মিল এমন মানুষের দেখা পেলাম। তাদের সাথে সংঘাতও হলো। একি ! সবার সাথে সংঘর্ষ হয় কেন? মনে মনে আমি ভীষণ অস্থির হয়ে পড়লাম। তাহলে কি এপথ ভুল পথ? আমি কি ভুল পথে চলেছি? কখনো মনে হয়েছে, আমিই ঠিক, এই প্রকৃত পথ। মানুষ যদি নিজেকে ভালোবাসতে পারে তবে সবচেয়ে সুন্দর হবে। নিজেকে ভালোবাসতে গেলে সে তার পরিবারকে ভালোবাসবে। আর পরিবারকে ভালোবাসা মানেই একটি গ্রামকে ভালোবাসা। একটি গোষ্ঠীর মানুষকে ভালোবাসবে। আর একটি গ্রাম মানেই তো সারা পৃথিবী। পৃথিবীর সব মানুষ – সব মানুষ সুন্দর হয়ে বাঁচবে। পৃথিবীতে কত বড় বড় কাজ করেছে মানুষ। একটা ছো্ট্ট পরিবারকে সুন্দর করা যাবে না? অবশ্যই যাবে। একটু যৌক্তিক হলে, একটু খোলামেলা হলে কত সমস্যা এমনিতেই মিটে যাবে। সম্পর্ক সহজ হলে কাজ সহজ হয়। আমরা চাইলেই তা করতে পারি।
জানিনা এ চিঠিখানায় আপনি ভুল বুঝবেন কিনা। ঈদের আগে আগে বাড়ি আসবো। আম্মাকে বলবেন, যেন বড় মামার কাছ থেকে হাজার চারেক টাকা নিয়ে আমাকে পাঠায়। বাসায় রান্নার কিছুই কেনা হয়নি। বাইরের খাওয়ায় খরচ বেশী এবং অস্বাস্থ্যকর। আম্মার তদারকিতে দেওয়া সম্পত্তির এটুকুই তো রিটার্ন মাত্র। আপনার সেন্টিমেন্টে লাগতে পারে। লাগাটাই স্বাভাবিক। কারণ আপনার শ্বশুড়বাড়ি। আমাদের কিসের সেন্টিমেন্ট? শিমু মংলায় পড়বে, বাবু স্কুলে। আপনারা না চাইলেও এসব করা হবে। দোয়া করবেন।

Sunday, August 16, 2020

প্রকৃতি ভূলেনি


লেখা ঃ মুনিয়া
শুনেছি তার আবার নতুন মানুষ হয়েছে....
এবার আর সে অভিনয় নয়,
ভালোবাসতে শিখেছে!

রোজ পুড়েছি যার ভালোবাসায়;
আজ সে'ও নাকি পুড়ছে,
অন্য কারো অবহেলায়!

নতুন কাউকে পেয়েই যে অবহেলায় পায়ে
ঠেলেছিল আমায়;
এখন সে'ও কারো পায়ের কাছে নত হয়ে রয়!

দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে যে মানুষটা বারবার ঠকিয়েছে আমায়;
সত্যি ভালোবেসে,
আজ সে'ও হেরে যায়।

সেদিন আমার চিৎকার যার কান অব্দি পৌছায় নি,
দেখে'ও দেখেনি যার চোখ;
আজ যে তার নীরব কান্নার অধিকারটুকু'ও নেই!

যার বিরহে অশ্রু ঝরে পাথর হয়েছে চোখ;
আজ তার জীবন জুড়ে আছে দীর্ঘ শোক।

হ্যাঁ! এখন তার নতুন মানুষ হয়েছে।
আমাকে তিলে তিলে করেছিল যে শেষ,
তার প্রতিশোধ'ই নিচ্ছে আজ তার নতুন মানুষ!

নাহ, অভিশাপ দেই নি কখনো।
কিন্তু প্রকৃতি?
সে ভুলে গিয়েছিল,
প্রকৃতি ভুলে নি!

তার আবার নতুন মানুষ হয়েছে.....
ভালোবাসার মানুষ!!

ইচ্ছে




সৌরভ 
তোমাকে একটি চিঠি লিখতে ইচ্ছে হয়। নিস্তব্ধতায় তুমিহীনতার গল্প বলতে ইচ্ছে হয়। কোলাহলী অভিনয়ে আমি ক্লান্ত। মনের আকাশে মেঘ জমেছে খুব। বৃষ্টি নামলে মন্দ হতো না। বৃষ্টিশুন্য মেঘ কেবলই অন্ধকারের গল্প লিখে। তুমি আক্ষেপ নাকি অপেক্ষা আমি জানিনা। তবে তুমিই সূর্যোদয় সূর্যাস্ত। তোমাকে যদি বোঝাতে পারতাম আমার উঠে দাঁড়ানোর মুহূর্তে তোমাকে কতখানি প্রয়োজন তাহলে হয়তো আজ অন্য সারমর্মে আমার অবস্থান থাকতো! তোমাকে বোঝাতে ইচ্ছে হয়। 
রাত এখন ২ঃ৫৮ মিনিট ছায়াশুন্য অন্ধকারে একা কামরায় মোমবাতি জ্বালিয়ে তোমাকে আমার ইচ্ছে লিখছি। ধোঁয়াশা ঠোঁট, একহাতে কলম অন্যহাতে ঘুমের ঔষধ। খুব ঘুমাতে ইচ্ছে হয়। আমার এ-ও ইচ্ছে হয় এই মুহূর্তে তোমার কোলে মাথা রেখে পৃথিবীতে আমার শেষ ঘুমটাকে বরণ করে নিতে।
জানালার ওপাশে ঝিঁঝি পোকারা খুব ডাকছে আমায়। তারা আমার কাছে তোমার নাম জানতে চাই। কি বলবো বলতো? অতুন্দ্রীলা, নীলাদ্রি, নাকি তরু? 
এগুলো তো তোমার নাম না শুধুই আমি ডাকি। তাহলে কি বলবো ওদের? 
তোমাকে চিনানো টা-ও যে বারন।
তোমাকে চিনাতে ইচ্ছে হয়। শহরের প্রতিটি বিলবোর্ডে এমনকি প্রতিটি কংক্রিটেও লিখে দিতে ইচ্ছে হয় *তুমি শুধু আমার! শুধুই আমার*। 
প্রিয় আমার শেষ বিদায়ে তুমি থেকো না। আমার আত্মা তোমাকে প্রশ্ন করতে পারে হয়তো, কেন এলে না অল্প কিছুক্ষণ পূর্বে?
খুব ঘুম পাচ্ছে আমার! 
ভালো থেকো আমার নীল রঙের বিষাদ।